০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে যুদ্ধ আতঙ্কে পর্যটকরা

কাশ্মীরের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের আনন্দের মুহূর্ত এখন রূপ নিয়েছে ভয় ও অনিশ্চয়তার এক কঠিন বাস্তবতায়। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান হামলার আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের মধ্যেও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

পাহাড় ঘেরা মনোরম হোটেলগুলোর যেসব কক্ষ একসময় ‘প্রিমিয়াম রুম’ হিসেবে ধরা হতো, সেগুলোর পাহাড়মুখী জানালাগুলো এখন মনে হচ্ছে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু। আতঙ্কিত পর্যটকরা একে একে এসব কক্ষ ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাচ্ছেন। অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগেই অতিথিদের নিচতলায় স্থানান্তর করছেন।

মুজাফফারাবাদ শহরের একটি হোটেলের এক কর্মী জানান, “এই মুহূর্তে হোটেলে নতুন কোনো অতিথি নেই। যারা ছিলেন, তারাও ক্রমে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। আমরা রাতের বেলা আলো নিভিয়ে রাখছি। কারও সাহস নেই এখন পাহাড়মুখি জানালা দিয়ে ঘুমানোর।”

বিবিসির একটি সাংবাদিক দলও নিরাপত্তাজনিত কারণে হোটেলের নিচতলায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত দুই রাত ধরে মুজাফফারাবাদ ও তার আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি নিরাপত্তার স্বার্থে একটি পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। বিস্ফোরণের শব্দ ও আলোর ঝলকানিতে আতঙ্কিত শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “রাতভর কামান হামলার আওয়াজে ঘুমাতে পারিনি। জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের আলো দেখতে পাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে।”

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার (৭ মে) ভোরে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়, যার মধ্যে মুজাফফারাবাদ অন্যতম। এর পরপরই পুরো শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি মেনে নিয়েছেন, যদিও মনে মনে তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার রাতেও একইভাবে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল গোটা এলাকা। দোকানপাট, হোটেল এমনকি ঘরবাড়ির আলোও নিভিয়ে রাখা হয়। স্বাভাবিক সময়ে রাত পর্যন্ত জনমুখর থাকা সড়কগুলো এখন নিস্তব্ধতায় মোড়া। ব্যবসায়িক কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বহু পর্যটক ইতিমধ্যেই তাদের বুকিং বাতিল করেছেন কিংবা পূর্বনির্ধারিত সফর স্থগিত করেছেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

পরকীয়ায় মা ও মেয়ে হত্যার রহস্য উন্মোচন করলো পুলিশ

কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে যুদ্ধ আতঙ্কে পর্যটকরা

Update Time : ০৭:৫৪:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫

কাশ্মীরের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের আনন্দের মুহূর্ত এখন রূপ নিয়েছে ভয় ও অনিশ্চয়তার এক কঠিন বাস্তবতায়। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান হামলার আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের মধ্যেও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

পাহাড় ঘেরা মনোরম হোটেলগুলোর যেসব কক্ষ একসময় ‘প্রিমিয়াম রুম’ হিসেবে ধরা হতো, সেগুলোর পাহাড়মুখী জানালাগুলো এখন মনে হচ্ছে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু। আতঙ্কিত পর্যটকরা একে একে এসব কক্ষ ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাচ্ছেন। অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগেই অতিথিদের নিচতলায় স্থানান্তর করছেন।

মুজাফফারাবাদ শহরের একটি হোটেলের এক কর্মী জানান, “এই মুহূর্তে হোটেলে নতুন কোনো অতিথি নেই। যারা ছিলেন, তারাও ক্রমে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। আমরা রাতের বেলা আলো নিভিয়ে রাখছি। কারও সাহস নেই এখন পাহাড়মুখি জানালা দিয়ে ঘুমানোর।”

বিবিসির একটি সাংবাদিক দলও নিরাপত্তাজনিত কারণে হোটেলের নিচতলায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত দুই রাত ধরে মুজাফফারাবাদ ও তার আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি নিরাপত্তার স্বার্থে একটি পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। বিস্ফোরণের শব্দ ও আলোর ঝলকানিতে আতঙ্কিত শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “রাতভর কামান হামলার আওয়াজে ঘুমাতে পারিনি। জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের আলো দেখতে পাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে।”

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার (৭ মে) ভোরে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়, যার মধ্যে মুজাফফারাবাদ অন্যতম। এর পরপরই পুরো শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি মেনে নিয়েছেন, যদিও মনে মনে তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার রাতেও একইভাবে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল গোটা এলাকা। দোকানপাট, হোটেল এমনকি ঘরবাড়ির আলোও নিভিয়ে রাখা হয়। স্বাভাবিক সময়ে রাত পর্যন্ত জনমুখর থাকা সড়কগুলো এখন নিস্তব্ধতায় মোড়া। ব্যবসায়িক কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের পর্যটন খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বহু পর্যটক ইতিমধ্যেই তাদের বুকিং বাতিল করেছেন কিংবা পূর্বনির্ধারিত সফর স্থগিত করেছেন।